ইলিয়াস মশহুদ 18 May, 2023 03:16 PM
সিলেটের ঐতিহ্যবাহি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া ক্বাসিমূল উলূম হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাযা লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১8 মে) দুপুর আড়াইটায় নগরীর শাহী ঈদগাহ ময়দানে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মুসল্লি অংশ নেন। জানাযায় ইমামতি করেন মাওলানা মুহিব্বুল হকের বড় ছেলে ও দরগাহ মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা এনামুল হক জুনাইদ।
জানাযা শেষে প্রবীণ এই আলেমকে সিলেট দরগাহ মাদরাসায় মুফতী আবুল কালাম জাকারিয়ার সমাধির পাশে দাফন করা হয়।
মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাজায় অংশ নিতে বুধবার রাত থেকেই মুসল্লিরা মাদরাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকেন। মুসল্লিদের আগমণে শাহী ঈদগাহ ময়দানে মরদেহ নিয়ে যাওয়ার আগেই দরগাহ মাদরাসার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
মরহুমের লাশ শাহী ঈদগাহে আনার পর তাঁর হাজারো ছাত্র, শীষ্য, ভক্ত-অনুরক্ত, রাজনীতিবিদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়ান। এসময় শাহী ঈদগাহ ময়দানে এক শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করে। মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর জানাযা পূর্বে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক, আলেম, রাজনীতিক ও মরহুমের স্বজনসহ অনেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
মরহুমের জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আযাদ দ্বীনি এদারা ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওমীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহুদ্দিন সিরাজ, এদারা বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল বছির, দরগাহ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, দরগাহপুর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লাামা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী, কানাইঘাট মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আলিম উদ্দিন দুর্লভপুরী, হরিপুর মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা হিলাল আহমদ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা অলিউর রহমান, কাজিরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আহমদ আলী চিল্লা, সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জামেয়া রেঙ্গার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান, জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের প্রিন্সিপাল সাবেক এমপি শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা মুখলিছুর রহমান রাজাগঞ্জী, ধনুকান্দি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা জাবেদ প্রমুখ।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিচর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহিবুর রহমান, সিলেট ৫ আসনের সংসদসদস্য আলহাজ হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি, সুবহানীঘাট মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আহমদ সগীর, দরগাহ মাদ্রসার সহকারী মুহতামিম মাওলানা আসাদ উদ্দিন, কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, দরগাহ মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো. হাসান, মাওলানা এনামূল হক, মাওলানা জুনায়েদ কিয়ামপুরী, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরের সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, জমিয়ত নেতা মাওলানা খলিলুর রহমান, আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআনের সেক্রেটারী মাওলানা ইমদাদুল হক নোমানী, রাজনীতিবিদ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইনসহ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানাযাপূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিশিষ্টজনেরা বলেন, মাওলনা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী ছিলেন একজন সংগ্রামী আলেমে দ্বীন ও বহু গুণে গুনান্বিত ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে দেশবাসী একজন খালিস ইলমে হাদীসের উজ্জল নক্ষত্রকে হারালো, যা সহজে পুরণ হবার নয়। তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। সিলেটবাসী তাঁকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে। বক্তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, গতকাল (১৭ মে) বুধবার মাগরিবের নামাজের পর তিনি দরগাহ মাদরাসায় তার নিজ বিশ্রামকক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ এই আলেম সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য, সিলেটের প্রাচীন শিক্ষাবোর্ড আযাদ দ্বীনী এদারার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, খাদিমুল কুরআন পরিষদের সভাপতি, সিলেট জেলা উলামা কমিটির চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা ফতোয়া বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র-শিক্ষক, ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জ দরগাহপুর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগার শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন। তখন থেকে আমৃত্যু প্রায় ৫১ বছর ধরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আল হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আযাদ দ্বীনি এদারার সভাপতি মাওলানা জিয়া উদ্দিন, চরমোনাই পীর মুফতী রেজাউল করিম, খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী, জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহানসহ বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) নেতারা।